Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ছবি
শিরোনাম
রাজস্ব ড্রাম বিতরণ
বিস্তারিত

বীজ ধান উৎপাদন ও সংরক্ষণ কলাকৌশল

কৃষিবিদ মোঃ তারিক হাসান

বীজ কৃষির ভিক্তি। বীজ জীবন্ত এবং প্রয়োজনীয় সব উপাদান দ্বারা এমন অনুপমভাবে সুসজ্জিত যে সঠিক সময়ে আকাংখিত স্থানে অনুকূল পরিবেশ পেয়ে নতুন বংশধরের সূচনা করতে পারে। এই জীবন্ত বস্তুটিকে পরবর্তী মৌসুম পর্যন্ত ভালভাবে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যে সকল কাজ ও কৌশল অবলম্বন করতে হয় সেগুলোকেই বীজ সংরক্ষণ বলে। বীজ সংরক্ষণ মৌলিক তত্ত্বের একটি প্রধান নীতি হলো, যে গুণগত মান নিয়ে বীজ গুদামে ঢোকে, বাহিরে আসার পর সে মান তার চেয়ে ভাল নাও হতে পারে। মনে রাখা প্রয়োজন যে, বীজ যতই ভাল হোক না কেন তা যদি ভালোভাবে সংরক্ষণ করা না যায় তবে সে বীজ ভাল থাকবে না। সংরক্ষণকালীন সময়ে বীজের জীবন এবং বীজের মান নির্ভর করে বীজ ফসল কর্তনপূর্ব ও পরবর্তী কাজগুলো সঠিকভাবে করা হয়েছে কিনা তার উপর। তাই ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির মূল উপকরণই হচ্ছে উন্নতমানের বীজ। বাংলাদেশে ভাল বীজের ব্যবহার অত্যন্ত অপ্রতুল। এর কারন এক দিকে সরকারী পর্যায়ে ভাল বীজের উৎপাদন ও বিতরণের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপর্যাপ্ত। অন্যদিকে বেসরকারী পর্যায়ে ভাল বীজের উৎপাদন ও বিতরণের ব্যবস্থা এখনও বিশ্বস্তভাবে গড়ে উঠেনি। এছাড়া চাষী পর্যায়েও ভাল বীজের ব্যবহারের গুরুত্ব ব্যাপকভাবে গ্রহণ হয় নাই। বর্তমানে প্রায় ৯০% কৃষক নিজেদের  উৎপাদিত বীজ দ্বারাই নিজেদের চাহিদা পূরণ করে থাকেন। কিন্তু এই বীজ প্রকৃত গুণগত মানসম্পন্ন নয় বলে অধিক ফলন লাভ প্রায় অসম্ভব। কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের বীজ উৎপাদনের কলাকৌশল এবং বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণের আধুনিক প্রযুক্তির অপ্রতুলতা মূখ্য কারন। অন্যদিকে যেহেতু কৃষকের রক্ষিত ধানই বীজ সরবরাহের প্রধান উৎস, সেহেতু বেশিরভাগ কৃষকই তাদের রক্ষিত বীজ ধান বদলান না, যার ফলে অনেক ক্ষেত্রে কৃষকের রক্ষিত বীজের গুণগতমান নষ্ট হয়ে যায়। অতএব ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কৃষকের রক্ষিত বীজের গুণগতমান উন্নত করার প্রয়োজন রয়েছে। কৃষকের জমিতে ধান বীজ উৎপাদন, বাছাই এবং সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার উপর কৃষকদের সচেতন করতে পারলে এ উদ্দেশ্য সফল করা সহজ হবে। কৃষক যাতে তাদের জমিতে উন্নতমানের বীজ উৎপাদন, বাছাই ও বর্ধনের উন্নতি পদ্ধতি এবং বীজ সংরক্ষণে উন্নত কলাকৌশল সম্পর্কে সচেতন হয়ে মানসম্পন্ন বীজ ব্যাপক ব্যবহারের মাধ্যমে ধানের ফলন বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য  ভূমিকা পালন করতে পারেন তার বলিষ্ট প্রচেষ্টা নেয়া প্রয়োজন।

বীজ উৎপাদনের আধুনিক পদ্ধতি

কেবলমাত্র আধুনিক ধানের জাত ব্যবহার করলেই ভাল বীজ উৎপাদন আশা করা যায়না। মানসম্পন্ন বীজ পেতে হলে ধান চাষের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উৎপাদন সরবরাহ ও উপযুক্ত পরিবেশের যোগান দেয়া একান্ত দরকার। ধানচাষের জন্য যথাসময়ে বীজ বপন ও চারা রোপণ যেমন জরুরি তেমনি সার, সেচ, কীটনাশক ইত্যাদি প্রয়োগের উপযুক্ত সময় এবং প্রয়োগবিধির প্রতি লক্ষ্য রাখাও গুরুত্বপূর্ন। বীজ ধানের ভালো ফলন পেতে হলে জাত নির্বাচন থেকে শুরু করে ধান কাটা  পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে ফসলের পরিচর্যা করে যেতে হবে।

ধান বীজ সংরক্ষণপূর্ব চাষী ভাইদের করণীয় ঃ

             ক্ষেতে অবস্থিত ফসল থেকে কাঙ্খিত গাছগুলো একটি একটি করে বাছাই করে বা ক্ষেতের শস্যের অংশ বিশেষকে বীজের জন্য চিহ্নিত/ বাছাই করতে হবে। ক্ষেতের বেশি সবল ও সুস্থ অংশ বাছাই করার জন্য মাঠের অংশ বিশেষ সনাক্ত করা উচিত।

             ক্ষেতে অবস্থিত কাঙ্খিত প্রতিটি গাছ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সাধ্যমত ক্ষেতের কিনারা বাদ দিয়ে ভিতর থেকে এমন গাছ বাছাই করতে হবে যেগুলো সঠিক জাতের এবং বেশ পুষ্ট ও সুস্থ হয়।

             সহজভাবে সনাক্তকরণের জন্য বাছাই করা প্রতিটি গাছ কাঠি দিয়ে চিহ্নিত করতে হবে। বীজ সংগ্রহের জন্য পরিপক্ক অবস্থায় প্রথম বাছাই করা গাছ কাটতে হবে এবং পরে মাঠের অবশিষ্ট ফসল কাটা উত্তম।

             বীজের জন্য কেটে নেয়া গাছগুলো আলাদাভাবে রাখতে হবে যাতে এগুলো একই ফসলের সাথে অন্যগাছের দানা মিশে না যায়। বীজের গুণাগুণ নষ্ট হওয়া রোধের জন্য বাছাই করা গাছগুলো ভালভাবে শুকাতে হবে।

             বীজের জন্য ক্ষেতের অংশ বিশেষ বাছাই পদ্ধতির ক্ষেত্রে বিদ্যমান শস্যক্ষেতের মাঝ থেকে অথবা যতদুর সম্ভব ভিতর থেকে অংশ বিশেষ নির্বাচন করা দরকার।

             সংরক্ষিত এলাকার প্রতি নিয়মিত বিশেষ দৃষ্টিসহ উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি গ্রহণ করার পর, ফসল পাকার সময় গাছের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখা দরকার যাতে বিজাতীয় গাছ কেটে সরিয়ে ফেলা যায়।

             জমিতে ধান পাকলে বা ধান গাছ শুকিয়ে গেলে ধান কাটায় বিলম্ব করা মোটেই উচিত নয়। এতে কিছু ধান ঝরে পড়তে পারে এবং ধানের শীষকাটা লেদাপোকা এবং পশুপাখির আক্রমণ হতে পারে। শীষের অগ্রভাগ থেকে ধান পাকা শুরু হয়।

             কাছে গিয়ে সারা ক্ষেতের ধান পাকা পরিক্ষা করতে হবে। শীষের অগ্রভাগের শতকরা ৮০ ভাগ ধানের চাল শক্ত ও সচ্ছ এবং শীষের নিচের শতকরা ২০ ভাগ ধানের চাল আংশিক শক্ত ও সচ্ছ হলে ধান ঠিকমত পেকেছে বলে বিবেচিত হবে।

             ধান মাড়াই করার জন্য পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন জায়গা বেছে নেয়া দরকার। কাঁচাখোলার উপর সরাসরি ধান মাড়াই না করে চাটাই বা হোগলার উপর ধান রেখে পা দিয়ে বা উপযুক্ত মাড়াই যন্ত্রের সাহায্যে ধীরে ধীরে মাড়াই করার দরকার। অথবা ধানের আটি তিন বাড়ি দিয়ে যে পুষ্ট-ভারী ধান পাওয়া যাবে শুধুমাত্র সেগুলোকেই কুলা দিয়ে ভালোভাবে পরিস্কার ও শুকানোর পরে বীজ হিসাবে নেওয়া যাবে।

             এভাবে ধান মাড়াই করলে ধানের ক্ষতি কম হয় এবং ধান পরিস্কার থাকে। বীজ ধান এভাবে মাড়াই করার পর অন্তত পক্ষে ৪-৫ বার রোদে শুকিয়ে নেয়া দরকার। বাদলা দিন থাকলে ধান মাড়াই করা ও শুকানো কষ্টকর হয়। সেজন্য  শীষ কেটে ছোট ছোট আঁটি করে ঘরের ভিতর ঝুলিয়ে দিয়ে শুকানো যায়। না হলে ধানের বীজ গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

বীজ সংরক্ষণঃ বীজ ধান ঠিকমত সংরক্ষণ না করলে একদিকে কীটপতঙ্গ ও ইঁদুর নষ্ট করে, অপরদিকে গজানোর ক্ষমতা কমে যায়।            ফলে বীজ ধান থেকে আশানুরূপ সংখ্যক চারা পাওয়া যায় না। বীজ ধান কাটা ও মাড়াইয়ের  পর ভালোভাবে সংরক্ষণ               করতে নি¤œবর্ণিত পদক্ষেপগুলো মেনে চলা প্রয়োজন।

দ্ববীজ সংরক্ষণের আগে পর পর কয়েকবার রোদে অথবা প্রয়োজনে ড্রায়ারের সাহায্যে ভলোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে যেন বীজের আর্দ্রতা শতকরা ১২ ভাগের নিচে থাকে। দাঁত দিয়ে বীজ কাটলে কট কট শব্দ করে তাহলে বুঝতে হবে বীজ ঠিকমত শুকিয়েছে।

             বড় বড় পুষ্ট ধান বাছাই কবে নিতে হবে। কুলা দিয়ে ঝেড়ে ১.৭৫-২.৫০ মিলিমিটার (জাতের উপর নির্ভর করে) ছিদ্র বিশিষ্ট তারের দড়ির ছাকনি দিয়ে বাছাই করে নেয়া যেতে পারে।

             যে পাত্রে বীজ রাখা হবে তাতে যেন কোন ছিদ্র না থাকে। বীজ রাখার জন্য তেলের ড্রামে কিংবা বিস্কুট বা কেরোসিনের টিন প্রভৃতি ধাতব পাত্র ব্যবহার করা ভালো।

             ধাতব ব্যবহার করা সম্ভব না হলে মাটির মটকা, কলস, প্লাস্টিক ড্রাম বা মোট পলিথিনের থলি ব্যবহার করা যেতে পারে। পাত্র ভালোভাবে পরিস্কার করে শুকিয়ে নিতে হবে। মাটির পাত্র হলে পাত্রের বাইরের গায়ে আলকাতরা দিয়ে দুইবার প্রলেপ দিতে হবে।

             রোদে শুকানো বীজ ঠান্ডা করে পাত্রে ভরতে হবে। পাত্রটি সম্পূর্ণ বীজ দিয়ে ভরাট করে রাখতে হবে। যদি বীজের পরিমাণ কম হয় তবে বীজের উপর কাগজ বিছিয়ে তার উপর শুকানো বালি অথবা ছাই দিয়ে পাত্র পরিপূর্ণ করতে হবে।

             এবার পাত্রের মুখ ভালোভাবে বন্ধ করতে হবে যেন বাতাস ঢুকতে না পারে। বীজের পাত্র মাচায় রাখা ভাল যাতে পাত্রের তলা মাটির সংস্পর্শে না আসে। গুদামে বায়ু চলাচলের পার্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে।

             বীজ কখনো স্যাঁত স্যাঁতে জায়গায় সংরক্ষণ করা ঠিক নয়। সংরক্ষণ করা বীজ মাঝে মাঝে পরীক্ষা করা দরকার যাতে কোন প্রকার পোকামাকড় বা ইঁদুর ক্ষতি করতে না পারে।

             দরকার হলে বীজ বের করে মাঝে মধ্যে শুকিয়ে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে পরবর্তী মৌসুমে বীজ ব্যবহার, বিক্রয় বা বিতরণের পূর্বে অবশ্যই বীজ গজানোর পরীক্ষা করে নিশ্চিত হবেন যে কমপক্ষে ৮০ টি সুস্থ-স্বাভাবিক চারা গজিয়েছে।

জেনে রাখা ভালো বীজকে বলা হয় “শান্তির দূত”;  ভালো বীজে করলে চাষ, ফলন দ্বিগুন, মিটবে আশ”